রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

ছোট গল্প : গোলক ধাঁধা । আলমগীর হোসেন শিশির

গোলক ধাঁধা গোলক ধাঁধা

বারোর গোলক ধাঁধা

 

 

জনাব হাবিব খানের নাম ডাক এলাকায় খুব সম্মানের সহিত উচচারিত হয়। বনেদী গোষ্ঠী বলে কথা নয়, তার আচারণে বিদ্যামান অভিজাতের ছাপ থাকলেও পরোপকারী দানবীর হাবীব খান। তার শ্যালক পড়া লেখার পাঠ ঢুকিয়ে সোজা চলে আসে খান বাড়ী। পরিচয় হয় অত্র এলাকার দুষ্টরানী মিষ্টি মেয়ে বিন্দুর সাথে। খান বাড়ীতে কোন পালঙ্ক নেই। খান সাহেবের দাদা নাকি পালঙ্ক থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গেছিল সেই থেকে খান বাড়ীতে পালঙ্ক নিষিদ্ধ করা হয়, কিন্তু শ্যালক এবং বিন্দু কৌশলে আটতে থাকে। এক সময় তার কফল হই, মহাধুমধামে খান বাড়ীতে পালঙ্ক ওঠে।

ফরিদের পুত্র ফাহিম প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষায় গোল্ডেন গ্লাস পাই। ফরিদের গর্ভে বুকটা ভরে ওঠে। ফাহিম তার বাবাকে

বলে সে নতুন স্কুলে যাবে তাই তাকে একটা নতুন স্কুল ব্যাগ কিনে দিতে হবে। ফরিদ সন্তানের মিষ্টি মুখের পানে চেয়ে না।

করতে পারেনী, তাই সে রাজী হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত ফাহিম তার বাবার দু গালে চুমু দিয়ে খেলতে চলে যায়। ফরিদের স্ত্রী ফজিলা তাকে সুধায় সেকি পারবে তার ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে? ফরিদ দীর্ঘশ্বাস ঘাড়ে!

মীর সাহেবের বড় নতী আমানের দাবী তাকে একটি কুকুর কিনে দিতে হবে। মীর সাহেব রাজী। ক দিন পর কুকুরটির ঠান্ডা জ্বর হয় মীর সাহেব মেডিসিন ডাঃ হাজির করে মীর সাহেবের নাতী বলে কথা! ফরিদ দেখে হতবিহব্বল হয়, বলে হায়রে দুনিয়া!

কিছু দিন পর আর একটি মহা বিপদ, হাবিব খান সাহেবের একমাত্র সন্তান পালঙ্ক থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসা চলছে। হাবিব খান গরু জবেহ করা দা নিয়ে শ্যালক কে তাড়া করে। শ্যালক পলাতক।

ফরিদের ছেলে ফাহিম ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টায় কবে সেই বিশেষ দিন আসবে? দেখতে দেখতে সেই বিশেষ দিনটি চলে এলো বলে, ফাহিমের হৃদয় কোণে উকি দিচ্ছে নবো আনন্দের ঢেউ, পুলোকিত হচ্ছে তার মন, কিভাবে সে নতুন ব্যাগ ব্যবহার করবে সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তার। ওদিথে ফরিদ মহা টেনশনে আছে এখনও টাকার কোন ব্যবস্থা করতে পারেনী, আজ একটু রাত করে ফরিদ বাড়ী ফিরলো কাল ঈদুল আযহা। বাড়ী এসে দেখল ফাহিম আবার অসুস্থ! ফরিদ গ্রাম্য ডাঃ এর কাছে গেলে ডাঃ তাকে বলে এত রাতে সে যেতে পারবেনা। তাকে আগাম ফি দিতে হবে ফরিদ তাতে রাজী হয়। বাড়ীতে এসে বাড়ীতে থাকা সর্বশেষ এককেজী চাউল ডাঃ কে দিয়ে দেই। থমকে যায় পৃথিবী। ফরিদ মীর সাহেবের কাছে আবারো আগাম বেতন চাই মীর সাহেব তাকে অনেক আজে বাজে কথা বলে। ফরিদের আর্তনাদ তার কর্ণগব্বর স্পর্শ করেনী। মীর ফরিদকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই। মানবতা ঢুকরে কেঁদে ওঠে! ফরিদের মনটা ভেঙে খান খান হয়ে যায়। ও হাঁটছে।

ফরিদ অনেক বার হাবিব খানের সাথে দেখা করতে চেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কারণে তা হয়নী। অবশ্য ফরিদের পুত্র ফাহিম গোল্ডেন প্লাস পাওয়ার পর ফরিদ একটি বাই সাইকেল কিনে দিয়েছিল উপহার হিসাবে। কিন্তু জানতে পারেনী ফরিদের বাড়ীর এমন নিদারুণ কষ্টের কথা।

ফজিলা বেগম সন্তানের শেষ ইচ্ছার জন্য নিজ নাকের নাকফুল খুলে স্বামীর হাতে দেই। ফরিদ নিতে রাজী না হলেও শেষোব্দি নাকফুল নিয়ে শহর অভিমুখে রওনা হয়। কাল সেই বহুল প্রতিক্ষত ১২৯ তারিখ তাকে স্কুল ব্যাগ নিয়েই ফিরতে হবে।

স্ত্রীর নাকফুলটি আর বিক্রি করা হলনা এটিতে তার মায়ের স্মৃতি জড়িত, সে কিডনী চোরের সাথে জড়িতদের কল্পরে পড়ে যায়। সন্তানের মুখে হাসি ফোঠানোর জন্য সে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। সে কিঠনী বিক্রি করবে বারোর প্যাঁচে পড়ে মাত্র বার হাজার টাকায়!

 

গোলক ধাঁধা

গোলক ধাঁধা

গল্প: বারোর গোলক ধাঁধা,

রচনা: আলমগীর হোসেন শিশির

গীতিকার: বাংলাদেশ টেলিভিশন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution